কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

জাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য   

জাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি। জাকাত ছাড়া দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ করে না। যারা জাকাত অস্বীকার করে তাদের হত্যা করা হবে। এবং যারা জাকাতের ফরয অস্বীকার করে তাদের কাফের বলে গণ্য করা হবে। এই জাকাত ফরয করা হয় ২য় হিজরীতে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমের বহু জায়গায় ইরশাদ করেছেন,
আর তোমরা নামায কায়েম কর, জাকাত আদায় করো এবং রুকু কর রুকুকারীদের সঙ্গে। (সূরা বাকারা : ৪৩)
আর যাদের ধন সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক এবং বঞ্চিতদের জন্য নির্দিষ্ট অধিকার।
এই পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামায এবং রোজার সম্পর্ক মানুষের দৈহিক পরিশ্রম ও মনের সাথে সম্পৃক্ত, পক্ষান্তরে জাকাত ও হজ্বের সম্পর্ক অর্থের সাথেও রয়েছে। বিশেষভাবে জাকাত ধনী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ওপরই ফরয হয়ে থাকে। হাদিস শরিফে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আর তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র বা অভাবী তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

ইসলাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। একজনের হাতে বিপুল অর্থ-সম্পদ জমা হওয়াকে ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম চায় ধনী-গরিব সবাই স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করুক। তাই দরিদ্রের প্রতি লক্ষ্য করে জাকাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। হাদিসের ভাণ্ডারে সংরক্ষিত হয়েছে জাকাতের বিশেষ গুরুত্ব সংবলিত অনেক হাদিস।

আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল আর নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে। (বুখারি, মুসলিম)

জারির ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার ওপর। (বুখারি, মুসলিম)

আবু সায়ীদ রা. বর্ণনা করেন,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নসিহত করছিলেন। তিন বার শপথ করে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, রমযানের রোযা রাখবে, জাকাত প্রদান করবে এবং সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য অবশ্যই বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে বলবেন, তোমরা নিরাপদে তাতে প্রবেশ কর (নাসায়ী: ২৩৯৫)

আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
তোমরা নিজেদের মালের জাকাত প্রদান করে তা হিফাজত কর আর সদকা দিয়ে রোগীদের রোগ আরোগ্য কর।

যারা জাকাত আদায় করে না তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির সংবাদ এসেছে:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
অন্যত্র ইরশাদ করেন-
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
যে কোন স্বর্ণ বা রুপার মালিক যদি আপন সম্পদের মালের জাকাত আদায় না করে, তার এ সম্পদকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে কিয়ামতের দিন তা দ্বারা পিঠ, পার্শ্ব এবং কপালে ছ্যাকা দিবেন। আর যখনই তা ঠাণ্ডা হবে সাথে সাথে আগুনে পুণরায় উত্তপ্ত করা হবে। এমন দিনে তাকে শাস্তি দেয়া হবে যে দিনটি হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। আর বান্দার বিচারকার্য শেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে। অত:পর সে দেখতে পাবে তার গন্তব্য হয় জান্নাতের দিকে নয়তো জাহান্নামের দিকে।

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দিয়েছেন অথচ সে তার জাকাত আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার সম্পদকে দুই চোখ বিশিষ্ট বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে। তারপর সাপটিকে কিয়ামতের সে দিবসে তার গলায় জড়িয়ে দেয়া হবে। সাপ তার দুই মুখে দংশন করতে করতে বলতে থাকবে, আমি তোমার বিত্ত, আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ।

সুনানে নাসায়ীতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি জাকাত আদায় করে না। সে কিয়ামতের দিন একটি অগ্নিখণ্ড নিয়ে আসবে যদ্বারা তার কপালে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে।

বুরাইদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
যে সম্প্রদায় জাকাত প্রদান করবে না আল্লাহ তাদেরকে দুর্ভিক্ষের মতো বিপদে নিপতিত করবেন।

জাকাত গরিবের প্রতি কোন করুণা নয় বরং তার হক- যা ধনী ব্যক্তিকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। এ কারণে আবু বকর রা. বলেছেন,
যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর যুগে একটি উটের রশিও জাকাত হিসেবে আদায় করত আর এখন তারা যদি জাকাত দিতে অস্বীকার করে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।(বুখারি: ১৩১২)
তার এ ভাষণের মর্মার্থই ছিল, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যাতে কেউ কাউকে তার অধিকার হতে বঞ্চিত করতে না পারে।